Tuesday, 14 April 2015

রামাযান মাসে বিতর সহ ১১ রাক‘আতের বেশী রাতের ছালাত (তারাবীহ) আদায় করেননি (বুখারী ১/১৫৪ পৃঃ; মুসলিম ১/২৫৪ পৃঃ; আবুদাঊদ ১/১৮৯পৃঃ; নাসাঈ ১/১৯১ পঃ:;

১১ বা ১৩ রাক‘আত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)রামাযান মাসে বিতর সহ ১১ রাক‘আতেরবেশী রাতের ছালাত(তারাবীহ) আদায় করেননি (বুখারী ১/১৫৪পৃঃ; মুসলিম ১/২৫৪ পৃঃ; আবুদাঊদ ১/১৮৯পৃঃ;নাসাঈ ১/১৯১ পঃ:;তিরমিযী ১-৯৯ পৃঃ; ইবনু মাজাহ ১/৯৬-৯৭ পৃঃ;মুওয়াত্ত্বা মালেক ১/৭৪ পৃঃ)। ওমর (রাঃ)উবাই বিন কা’ব ওতামীম দারী (রাঃ)-কে রামাযানমাসে লোকদের নিয়ে ১১ রাকা‘আত(তারাবীহ্র) ছালাত আদায়ের নির্দেশদিয়েছিলেন (মুওয়াত্ত্বা ১/৭১ পৃঃ; মিশকাতহা/১৩০২, হাদীছ ছহীহ; ঐ বঙ্গানুবাদহা/১২২৮ রামাযানমাসে রাত্রি জাগরণ অনুচ্ছেদ)।বঙ্গানুবাদ মিশকাতে মাওলানা নূরমোহাম্মদ আজমী মুওয়াত্ত্বা মালেকবর্ণিত উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় দু’কুলবাঁচিয়ে লিখেছেন, ‘সম্ভবতঃ হযরত ওমর(রাঃ) প্রথমে বিতর সহ এগার রাকাত পড়ারইব্যবস্থা করিয়াছিলেন।পরে তাঁহার আমলেই তারাবীহ বিশ রাকাতস্থির হয়, অথবা স্থায়ীভাবে ২০ রাকাতইস্থির হয়, কিন্তু কখনও আটরাকাত পড়া হইত’ (ঐ, ৩/১৯৯)। উক্তদাবী যে ভিত্তিহীন তা বলারঅপেক্ষা রাখে না।শায়খুল হাদীছ মাওলানা আজিজুল হক স্বীয়বঙ্গানুবাদ বুখারীতে ১১ রাক‘আতের ছহীহহাদীছেরঅপব্যাখ্যা করেছেন (ঐ, তারাবীর নামাজঅধ্যায় ২/১৯৬)এবং তাঁর হিসাব মতে ২০রাক‘আতের সাত খানা যঈফহাদীছ দিয়ে বুখারীর ছহীহ হাদীছকে রদকরার চেষ্টায় গলদঘর্ম হয়ে অবশেষে বলেন,‘দুর্বল রাবী সম্বলিত কতিপয়হাদীছ একত্রিত ও একই মর্মে বর্ণিতহইলে তাহা গ্রহনীয় হইবে’ (ঐ)।মাওলানা মওদূদী একইভাবে কতগুলো জাল-যঈফ হাদীছ ও আছার একত্রিতকরে যুক্তিবাদের সাহায্যে ছহীহহাদীছ সমূহকে এড়িয়ে যাওয়ারচেষ্টা করেছেন (দ্র: বঙ্গানুবাদ রাসায়েল ওমাসায়েল পৃঃ৩/২৮২-২৮৬:বঙ্গানুবাদ বুখারী (আধুনিক প্রকাশনী)২/২৭৯-৮২ হা/১৮৭০-এর টীকা-২৮)। অথচ এটাইসর্বসম্মতমূলনীতি যে, ‘যখনই হাদীছ উপস্থিত হবে,তখনই যুক্তি বাতিল হবে’। এখানে ছহীহহাদীছের বিধান সেটাই,যা উপরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ওমর (রাঃ)-এরআমল দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে।রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তোমাদেরউপরে অপরিহার্য হ’ল, আমার সুন্নাত ওখুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতএবং তাকে মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরা।তোমরা দ্বীনের মধ্যে বিদ‘আতসৃষ্টি করা হতে বিরত থাক। কেননা সকলবিদ‘আতই ভ্রষ্টতা (আহমাদ, আবুদাঊদ,তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৬৫‘কিতাব ওসুন্নাহকে আকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ)।শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, মুওয়াত্ত্বায়বর্ণিত ইয়াযীদ বিন রূমান কর্তৃকযে বর্ণনাটি এসেছে যে,‘লোকেরা ওমরের যামানায় ২৩ রাক‘আততারাবীহ পড়ত’ একথাটি যঈফ।কেননা ইয়াযীদ বিন রূমান ওমর (রাঃ)-এরযামানা পাননি (দ্র: আলবানী মিশকাতহা/১৩০২ টীকা-২)।
অতএবইজমায়ে ছাহাবা কর্তৃক ওমর, ওছমান ওআলীর যামানা থেকে ২০ রাক‘আততারাবীহ সাব্যস্তবলে যে কথা বাজারে চালু রয়েছে, তারকোন শারঈভিত্তি নেই। একথাটি পরবর্তীকালে সৃষ্ট।হাদীছের বর্ণনাকারী ইমাম মালেকনিজে ১১ রাক‘আত তারাবীহপড়তেন, যা রাসূল (ছাঃ) হ’তে প্রমাণিত(হাশিয়া মুওয়াত্ত্বা পৃঃ৭১; দ্র: তুহফাতুলআহওয়াযী শরহতিরমিযী হা/৮০৩-এর ব্যাখ্যা ৩/৫২৬-৩২)।বিশ রাক‘আত তারাবীহ-এর প্রমাণে বর্ণিতহাদীছটি জাল (আলবানী, ইরওয়াউল গালীলহা/৪৪৫, ২/১৯১ পৃঃ)।ভারত বিখ্যাত হানাফী মনীষী আনওয়ারশাহ কাশ্মীরী (রহ:) বলেন, বিশ রাক‘আতসম্পর্কে যত হাদীছ এসেছে,তার সবগুলিই যঈফ (আরফুশ শাযী, তারাবীহঅধ্যায়, পৃঃ ৩০৯)। হেদায়া-র ভাষ্যকার ইবনুলহুমাম হানাফী বলেন,২০ রাক‘আতের হাদীছ যঈফ এবং ছহীহ হাদীছসমূহের বিরোধী (ফাৎহুল ক্বাদীর ১/২০৫পৃঃ)। আল্লামা যায়লাঈহানাফী বলেন, বিশ রাক‘আতের হাদীছ যঈফএবং ছহীহ হাদীছ সমূহের বিরোধী (ফাৎহুলক্বাদীর ১/২০৫পৃ:)।আল্লামা যায়লাঈ হানাফী বলেন, বিশরাক‘আতের হাদীছ যঈফ এবং আয়েশা (রাঃ)বর্ণিত ছহীহ হাদীছেরবিরোধী (নাছবুর রা’য়াহ ২/১৫৩ পৃ:)। আব্দুলহক মুহাদ্দিছ দেহলভী হানাফী বলেন, রাসূল(ছাঃ) থেকে বিশরাক‘আত তারাবীহ প্রমাণিত নয়,যা বাজারে প্রচলিত আছে। এছাড়া ইবনুআবী শায়বাহ বর্ণিত বিশ রাক‘আতেরহাদীছ যঈফ এবং ছহীহ হাদীছেরবিরোধী (ফাৎহু সির্রিল মান্নানলিতা’য়ীদি মাযহাবিন নু‘মান, পৃঃ ৩২৭)।দেওবন্দমাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ক্বাসিমনানুতুবী বলেন, বিতরসহ ১১ রাক‘আততারাবীহ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)থেকে প্রমাণিত, যা বিশ রাক‘আতেরচাইতে যোরদার (ফুয়ূযে ক্বাসিমিয়াহ,পৃঃ১৮)। হানাফী ফিক্বহ কানযুদদাক্বায়েক্ব-এর টীকাকার আহসাননানুতুবী বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বিশরাক‘আত তারাবীহ পড়েননি; বরং আটরাক‘আত পড়েছেন (হাশিয়া কানযুদদাক্বায়েক্ব, পৃঃ৩৬: এ সংক্রান্তবিস্তারিত আলোচনা দেখুন: শায়খনাছিরুদ্দীন আলবানী প্রণীত ছালাতুততারাবীহ নামক তথ্যবহুল গ্রন্থ; ছালাতুররাসূল (ছাঃ) ৪র্থ সংস্করণ,


পৃঃ ১৭৩-৭৮)।